Monday, August 20, 2018

গরীবের ঈদ+ঈমানী পরিক্ষা.............
***ইকরামুল হক জাবের

কাঁদিস নে বাপু এখনো তো ঈদের ১ দিন বাকি আগামীকালই তর বাবা তর জন্য ঈদের জামা কিনে দিবেন রাইসার (৮) চোখ মুছে মুছে বল্লেন তাঁর মা, রাইসা ও একটু স্হীর সুরে বলল আমার জুতো ও লাগবে। হ্যা এটাও দিবেন,জাহানারা রাইসা কে বুকের ভিতর জড়িয়ে ধরে মনে মনে ভাবছেন, যেখানে প্রতিনিয়ত যা রুজি তা তো প্রতিদিনই শেষ হয়ে যায়, ঐখানে ওর বাবা কি ভাবে এত টাকা দিয়ে পোষাক কিনবেন, এদিকে রাসেল ও বাড়িতে আসবে মাদ্রাসা মনে হয় আজই বন্ধ হবে সে ও তো মনে মনে ভাবছে রমজানের ঈদে যখন ঈদের পোষাক পাইনি এবার হয়তো পাবো! কিন্তু এখন ও তো ওর বাবার পেকেট একদম খালি।কি করবো বুঝতেই পারছিনা।
নিশ্চুপ জাহানারা সাংসারিক চিন্তায় মগ্ন,এদিকে কেঁদে কেঁদে রাইসা ঘুমিয়ে পড়েছে মায়ের কোলে।

রাত প্রায় ১০ টা দরজায় কে যেন টুকা দিচ্ছেন, কোন কথা নেই জাহানারা তো প্রায় ভয় পেয়ে গেলেন, শংক্মিত কন্ঠে বললেন কে?দরজার ঐপার্শ থেকে বললেন আমি........জাহানারার বুঝতে পারলেন রাইসার বাবা এসেছেন।

তাই দেরি না করে দরজা খুলেই সালাম দিলেন,ওয়ালাইকুম.....বলে ঘরে প্রবেশ করলেন রহিম মিয়া,

রহিম মিয়া একজন সাধারন  মানুষ দাওয়াতে তাবলিগের মেহনতের ফলে পাঁচ ওয়াক্ত নামায সহ দ্বীনের সকল বিধিবিধান মেনে চলেন,দেখতে মুখ বর্তি দাড়ি রাসূলের সুন্নাত গায়ে বলতে গেলে একজন আল্লাহ ভিরু ও রাসুল প্রেমিক মোট কথা সন্দেহ নেই উনি একজন মুত্তাকি ঈমানদার মানুষ, প্রতিনিয়ত যা রোজগার করেন তা দিয়েই আলহামদুলিল্লাহ।

জাহানারা বল্লেন খাবার রেডি চলুন খেয়ে নেই রহিম মিয়া বল্লেন তুমি এখনো খাওনি? জ্বি না আপনার জন্য অপেক্ষা করছি আমি কি কখনো আপনাকে ছাড়া রাতের খাবার খাই একটু মুচকি হেঁসে বললেন জাহানারা,রাইসা কি খেয়ে ঘুমিয়েছে? জ্বি, আপদত ওর কান্নার কথা বললেন না জাহানারা, খাবার খেয়ে খেয়ে জিঙ্গাসা করলেন অনেক রাত হয়েছে এরকম তো বাহিরে থাকেন না, আজ ফিরতে এত দেরি হল, কোন সমস্যা তাও আবার আপনার চেহারা মলিন দেখাচ্ছে, আরে না দু দিন পরেই তো ঈদ খরচাপাতি লাগবে বাচ্ছাদের কাপড় চোপড়, আর তোমাকে তো সেই বিয়ের পর থেকে কিছুই দিতে পারছি না,তাই একটু চিন্তিত..........................

আমি কি কখনো আবদার করেছি আপনার কাছে?,আপনার মত একজন জীবন সঙ্গীনি যাঁদের আছে তাদের আর কোন কিছুর প্রয়োজন পড়ে না।
কি যে বল জাহানারা!

আর টাকা পয়সার কোন চিন্তা করবেন না আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন উনি একটা ফয়সালা করবেন,
তোমার মত একজন রমনী যারা স্ত্রী হিসাবে পেয়েছে তারা বড়ই ভাগ্যবান,জাহানারা কিছুটা লজ্জাবোধ করলেন এবং কথার ফাঁক দিয়ে জিঙ্গাসা করলেন
 রাসেল কি ফোন করেছিল?হ্যা করছিল বলল আগামীকাল আসবে,ওর শরীর ঠিক আছেতো, হ্যা,

এতক্ষনে খাবার  শেষ হাত ধোত করেই টেবিল থেকে উঠলেন রহিম মিয়া।

এবং জিবনের ভিবিন্ন দিক সহ ছেলে মেয়ের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে ভাবতে বিছানায় গড়া গড়ি করে ঘুমিয়ে গেলেন তিনি ,

অতপর প্রতিদিনের ন্যায় তাহজ্জুদের সময় জাগ্রত হলেন সাথে জাহানারা বেগম ও ওযু করলেন তাহাজ্জুদের সালাত এক সাথেই আদায় করে মালিকের দরবারে এক সাথে হাত উঠালেন, ওহে বিশ্ব প্রতিপালক তুমি তো সবই জানো তুমি তোমার বান্দাহ কে মদদ কর ইত্যাদি ইত্যাদি।

ফজর নামাজ পর নাস্তা করেই বাহির হয়েলেন রহিম মিয়া কাজের খুজে,যেখানে কাজ করতেন সেখানে আজ কাজ নেই,সকাল প্রায় ১০ টা  কি করবেন রাস্তা পাশ দিয়ে হেটে হেটে ভাবছেন,রাস্তার পাশে চায়ের দোকান থেকে পারভেজ মিয়া ডাক দিলেন রহিম মিয়া এদিকে আসো, বড় চিন্তিত মনে হচ্ছে,কি ব্যাপার কোন সমস্যা, রহিম মিয়া বললেন ইয়ে মানে.........ইয়ে মানে কি সেটা বল, আসলে ঈদের দুদিন বাকি,খরচাপাতি ঘরে নেই এদিকে ঈদ বলে কথা বাচ্ছাদের পোষাক লাগবে।

 অহ এ কথা এদিকে আসো পারভেজ মিয়া রহিমের কানে কানে কি যেন বললেন,
সাথে সাথে রহিম মিয়া রাগান্বিত কন্ঠে বললেন, না কখনো না,না খেয়ে মরবো তবুও হারাম টাকা উপার্জন করবো না, আরে রাগছেন কেন? এসব একটু একটু করলে আল্লাহ মাফ করবেন, জ্ঞান দিবেন না পারভেজ মিয়া শরীরে যতক্ষণ রক্ত থাকবে খেটে খাবো হারাম ভাবে টাকা উপার্জন করবো না,তকদিরে যা আছে তাই ঘটবে বলে চলে গেলেন রহিম মিয়া............................

এরকম শত রহিমের উপর পরিক্ষা নেয়ার পর আল্লাহ ঠিকই রহম করেন দুনিয়াতে ও পুরুষ্কার দেন আখেরাতে ও।

আল্লাহর নেক বান্দারা এরকমই বিপদে পড়লে ও এমন কাজ করেন না যে কাজে আল্লাহ অসুন্তুষ্ট, আল্লাহ নারাজ থাকেন।

সমাজে  শত লোক রয়েছেন যারা শয়তানের ধোকায় শিকার হয়ে একটুতেই নিজ ঈমান নামক দৌলত নষ্ট করে ফেলেন, নষ্ট করে ফেলেন আখেরাতের মুক্তি লাভের পথ।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে শয়তানের ধোকা থেকে ঈমানী পরিক্ষায় উত্তির্ণ করুন,এবং দৌলতে ঈমান নিয়ে কবর পর্যন্ত যাওয়ার তাওফিক দান করুন।আমিন।

No comments:

Post a Comment